দখিনের খবর ডেস্ক ॥ পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস একদিনে উদযাপন হলেও এবার এসব দিনগুলো ঘিরে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নেই কোনো বিশেষ আয়োজন। কিছু যুগলকে ঘুরতে দেখা গেলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অন্যান্য বছরের মতো এবার খুব একটা দেখা যায়নি। রাজধানীর ধানমন্ডি লেক, সংসদ ভবন এরিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়া, চন্দ্রিমা উদ্যান, সোহরাওয়ার্দি উদ্যান ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেকেই ঘর থেকে বের হননি। ফলে দেখা যায়নি মানুষের ভিড়ও। সব মিলিয়ে এবার বিশ্ব ভালোবাসার এই বিশেষ দিনে নেই কোনো রঙ, হারিয়েছে চিরচেনা ভালোবাসার আনুষ্ঠানিকতার জৌলুশ। অন্যান্য বছরের মতোই ভালোবাসার এ দিনটি উদযাপনের জন্য প্রিয়জনকে নিয়ে বের হয়েছেন সুলতানা স্বর্ণা। তিনি বলেন, অন্যান্য বছর এই দিনে অনেক বড় বড় অনুষ্ঠান হতো, কনসার্ট হতো, এবার কোনো অনুষ্ঠান নেই।’ করোনার জন্য বয়স্করা বের হচ্ছে না। আগে তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি বয়স্ক কাপলরাও বের হতেন এবার তারাও নেই। সব মিলিয়ে আগের মতো প্রঠুচঞ্চল মনে হচ্ছে না। ভালোবাসা মানে কি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভালোবাসার কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। এটা হৃদয়ের একটি অনুভূতি। ভালোবাসা মানে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস, পরস্পর বোঝাপড়া। ভালোবাসার মানুষটি সঙ্গে থাকলে নিজের প্রতি ভালোবাসা আরও বেড়ে যায়। মাঝেমধ্যে নানান বিষয়ে খুনসুটি হয় তবে ভালো সময়ই বেশি কাটে।’ ১ বছর আগে বিয়ে করেছেন চিকিৎসক দম্পতি সালমান আমির ও সুভা হক। দুইজনের সঙ্গে ধানমন্ডি লেকের রবীন্দ্র সরোবরে কথা হয়। তাদের দাম্পত্য নিয়ে জানতে চাইলে সালমান আমির বলেন, ‘ব্যস্ততার জন্য বের হওয়ার খুব একটা সময় হয় না। এবার বের হয়ে যেটা মনে অন্যান্য বছরের তুলনায় খুব একটা ভিড় নেও। সেটা হয়তো করোনার জন্যও হতে পারে। আমি যেটা মনে করি- ভালোবাসা মানে সবসময় পাশাপাশি থাকতে হবে, চোখে দেখতে হবে, কথা বলতে হবে এরকম নয়। ভালোবাসা হলো বন্ধন আর মনের মিল, বিশ্বাস থাকলে যতই দূর থাকি না কেন ভালোবাসার কোনো কমতি হতে পারে না।’ সম্পর্ক নিয়ে রবিউল ইসলাম নামে এক যুবক জানান, ভালোবাসার ধরণ এখন পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এখন ভার্চুয়াল সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে সম্পর্কগুলো শক্তিশালী না। দেখা গেছে সামান্য বিষয় নিয়ে সম্পর্কগুলো ভেঙে যাচ্ছে। আমার মতে-সম্পর্কে বিশ্বাস থাকলে যত সমস্যা আসুক না কেন সম্পর্কে ফাটল ধরবে না। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে সম্পর্কগুলো একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে যাচ্ছে। চাইলেও কোথাও যেতে পারছে না। অনেক সীমাবদ্ধতায় নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ায় সমস্যা হচ্ছে। ফলে এক ধরণের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ কাছাকাছি থাকার ফলে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। অনেকের সংসার ভাঙছে আবার সম্পর্কের ফাটল ধরছে। এ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন- সম্পর্ক ভাঙার আরেকটা কারণ হলো না বুঝে প্রেমে পড়া। সম্পর্ক করতে হলে ভালোভাবে চিন্তা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। হঠাৎ করে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত না নেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, এখন সহজেই ভার্চুয়াল সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। ভার্চুয়াল সম্পর্কের ফলে নিজেদের চেনা-জানার সুযোগ কম থাকে। ফলে সম্পর্কের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। অনেকেই সময় কাটানোর জন্য প্রেম করছেন। ফলে সহজেই একজনকে ছেড়ে আরেকজনে চলে যাচ্ছেন। সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেখা করাটাও জরুরি। দীর্ঘদিন দেখা না হলে অনেক ভালো সম্পর্কও নষ্ট হয়ে যায়। মনের মানুষটির সঙ্গে দেখা করা, পারস্পরিক বোঝাপড়া সম্পর্ককে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
Leave a Reply